মেয়ে হয়ে জন্ম নেবার পেইন ???

পেইন

 

মেয়ে হয়ে জন্ম নেবার পেইন ???

 

মেয়ে হয়ে জন্ম নেবার পেইন তো আর কম না এই সমাজে। তা তুমি যতই ডাক্তার,ইন্জিনিয়ার,জজ, ব্যারিস্টার, পলিটিসিয়ান, হোমমেকার যাই হও না কেন। পেইন আর প্যারা থাকবেই তোমার জীবনভর ।

পারিবারিক পেইনের কথা আর কি বলব। সবাই তা জানে। মানে কিনা সেটা অবশ্য ভাববার বিষয় বটে।
আজ বরং কর্মস্থলে পেইন নিয়ে কিছু বাতচিত করি।

আমার কাছে পৃথিবীর অন্যতম শুদ্ধ পবিত্র স্থান হচ্ছে ‘হাসপাতাল’ সেখান থেকেই শুরু করি ।
রোগীদের চিকিৎসা দেবার সময় আমরা যতই বাবা মা বলে সম্বোধন করি না কেন বলতে বাধা নেই অধিকাংশ পুরুষ রোগী এবং রোগীর লোকেদের নজর অতিশয় কুৎসিত, অসুস্হ। প্রতিটি নারী চিকিৎসক এবং মহিলা নার্স এর সাক্ষী । বিস্তারিত না বলি । মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না জনগন।

তথাকথিত লোকেরা ফিসফাস করে বলে–হাসপাতালে নাকি নাইট ডিউটিতে লেডি ডক্টরদের সাথে এইটা ঐইটা মালমশলা মিশ্রিত ঘটনা ঘটে । একটা দুটো কেচ্ছা কাহিনী কখনোই একটা কমিউনিটির চিত্র হতে পারে না। এসব গালগল্প রূপকথাতেই ঘটে। বাস্তবে নাইট ডিউটি করতে আসা প্রতিটি লেডি ডক্টর কে পরিবারের জন্য রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে এবং পরদিন সকালের নাস্তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে,বাচ্চার হোম ওয়ার্ক শেষ করিয়ে আক্ষরিক অর্থেই ছুটতে ছুটতে ডিউটিতে আসতে হয় জনগনের বাবা মা ভাই বোনের সেবা করতে। মশলাদার গল্প তৈরি করার মতো বাটার এবং পনির তার মনে থাকার সুযোগই নেই।

হাসপাতালের বাইরেও ডাক্তারদের কাজের ক্ষেত্র আছে। সে জায়গাগুলোর অবস্থাও খুব আলাদা কিছু না । নন মেডিকেলদের সাথে কাজ করার বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতাতে এ কথা শুনতে শুনতে মুখস্থ করে ফেলেছি — ডাক্তাররা তো চেম্বারে এসির মধ্যে বসেই ব্যাঙ্কে টাকা জমায়। আর নারী চিকিৎসক হলে তো কথাই নেই। আমাদের হাসিতেই নাকি বহু কাজ হয়ে যায়। মেডিকেল কলেজের মোটা মোটা কোন বই এ রকম হাসি কে নিয়ে থিওরি পাইনি যদিও।

শেষ করছি নিজের একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে।

আমি কাজের ব্যাপারে প্রচন্ড রকম পেশাদার এবং পারফেকশনিশ্ট একজন মানুষ। যেহেতু আমার কাজের ক্ষেত্র হাসপাতাল না তাই নন মেডিকেলদের সাথে যথেষ্ট যুদ্ধ করেই টিকতে হয় ।

তো আমাকে রোগী দেখতে হয়। রোগীদের প্রয়োজনেই অনেক সময় মোবাইল নম্বর শেয়ার করতে হয় । একেবারেই শুরু থেকে এই ইস্যুতে আমি একটা নীতি অবলম্বন করি। যে যে অফিস আমাকে অফিসিয়াল নম্বর প্রোভাইড না করে তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দেই— আমি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এলে রিসিভ করি না। আর পার্সোনাল নম্বর আমি অফিসের বাইরে কারো সাথে অর্থাৎ রোগী এবং তার আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করতে পারব না । কারন রাত দশটার পর আমি আমার পার্সোনাল নম্বর অফ করে ঘুমাই । আট ঘন্টা না ঘুমালে আমি ঠিক মতো কাজ করতে পারি না পরের দিন । যেহেতু আমি প্রাইভেট জব করি সেহেতু সারা জীবন এক জায়গায় কাজ করব না । কিন্তু আমার মোবাইল নম্বর সারা জীবন এটাই থাকবে । তাই মোবাইল নম্বর অফিসের বাইরে যাওয়া চলবে না।

আমি বরাবরই যুক্তিতে ভালো😋😉
অফিস কে ফাঁদে পরতেই হয় । কারন এই গ্রামস্য গ্রাম বন জঙ্গলে লেডি ডক্টর পাওয়া আর হাতী পালা প্রায় সমার্থক ।

তো আজ বিকেলে আমার রিপোর্টিং বস ফোন করে বললেন —- ডক্টর আপনি তো বলেছেন আপনার পার্সোনাল নম্বর অফিসের বাইরে দিতে আপনার আপত্তি আছে । আমাদের কর্পোরেট মোবাইল নম্বর তো এখনো এভেলেবল হয়নি।আর আমাদের টার্গেট পপুলেশন তো বাচ্চা। অনেকের প্যারেন্টস তো চায় আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে হেলথ ইস্যুতে । কি করা যায় বলুন তো ?
আমি বললাম — স্যার অফিসের আইপি ফোনে কন্ট্রাক্ট করতে বলুন অফিস আওয়ারে।
স্যার — আইপি ফোনে অনেক সময় লাইন বিজি থাকে ডক্টর।

আচ্ছা একটা কাজ কি করা যায় যাদের দরকার হবে ওরা প্রথমে হেড অফিসেই নক করবে।তখন আপনার নম্বর দিয়ে যদি বলা হয় নয়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত আই মীন অফিস টাইমে যোগাযোগ করতে ? আর তখন এইচআর থেকে আপনাকেও জানিয়ে দেয়া হলো এই নম্বর থেকে যোগাযোগ করবে আপনার সাথে।
তাহলে তারা আপনাকে অন্য সময়ে বিরক্ত করবে না।
এটা সম্ভব ?
আমি— জ্বী স্যার সম্ভব। ধন্যবাদ আপনাদেরকে আমার লিমিটেশন বুঝতে পারার জন্য।

মনে মনে ভাবলাম —- আহারে আমার অফিস ! কতুউউউ পেইন দেই আমি তুমারে। আই কি কত্তাম ?
অভিজ্ঞতা থেকেই এতখানি কঠিন হতে হয়েছে। নাহলে রাত দুইটার সময়েও রোগীর ফোন পেয়েছি— ‘ম্যাডাম রাতের ভাত খাওয়ার পর ওষুধ খাইতে ভুইল্লা গেছিলাম। এখন গেদার বাপ ডাইক্কা তুলল।
এখন কি খাইতে পারতাম ওষুধ ?’

গার্লস,
সাউন্ড কর্মস্থল চাইলে ডে ওয়ান থেকেই প্রেফেশানিজম, ডেডিকেশন দেখাবা ।আর বোল্ড থাকবা সব সময়। দেখবা পেইন কি খাবা, উল্টা তুমিই অফিসরে দৌড়ের উপরে রাখবা 😋

.
.পেইন
#মিম্ মি

Related posts

One Thought to “মেয়ে হয়ে জন্ম নেবার পেইন ???”

  1. […] চিকিৎসক সংখ্যা বিস্ফোরন প্রক্রিয়ায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মেধাবী মেয়ে…। মেধাবী ছেলেরা অনেকেই পরিবারের […]

Leave a Comment